দক্ষিণ সুরমায় কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না পতিতাবৃত্তি: পুলিশ কী করছে?
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকাটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নানা ধরনের অপরাধের জন্য আলোচনায় এসেছে। বিশেষ করে অবৈধ পতিতাবৃত্তির বিস্তার এবং এর পেছনে পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করছেন, পুলিশের চোখের সামনেই দিনের পর দিন রেসিডেন্সিয়াল হোটেল ও আবাসিক এলাকাগুলোতে দেদারসে চলছে যৌন বাণিজ্য, কিন্তু কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। বরং অনেক সময় পুলিশকে এই চক্রের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অবৈধ হোটেল-ভিত্তিক পতিতাবৃত্তি
দক্ষিণ সুরমা এলাকার বিভিন্ন হোটেল, বিশেষ করে লালাবাজার, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, শিববাড়ি ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে একাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলকে ব্যবহার করা হচ্ছে পতিতাবৃত্তির কেন্দ্র হিসেবে। অভিযোগ রয়েছে, কিছু হোটেল মালিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা যৌন ব্যবসা পরিচালনায় সরাসরি জড়িত। পুলিশ হয়তো মাঝে মাঝে অভিযান চালায়, কিন্তু তা অনেক সময়ই পূর্ব পরিকল্পিত এবং লোক দেখানো মাত্র। ফলে এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ না হয়ে বরং দিন দিন আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
সাধারণ মানুষ আশাবাদী ছিল যে, পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পুলিশের ভূমিকা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ। স্থানীয়রা জানান, পুলিশের উপস্থিতিতে অনেক সময় হোটেলে যৌন ব্যবসা চললেও তারা দেখেও না দেখার ভান করে। কখনও কখনও পুলিশ হোটেল মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা গ্রহণ করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এভাবে ঘুষ, অনিয়ম ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে একটি শক্তিশালী যৌন বাণিজ্য চক্র গড়ে উঠেছে।
আটক হলেও দ্রুত মুক্তি
পুলিশ মাঝে মাঝে কিছু অভিযান চালিয়ে কয়েকজন নারী ও তাদের ‘খদ্দর’কে আটক করে। সংবাদমাধ্যমে তা নিয়ে ছোটখাটো রিপোর্টও প্রকাশ হয়। কিন্তু সেই আসামিরা খুব দ্রুত জামিনে মুক্তি পেয়ে যায় এবং আবারও সেই একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধীরা বরং আরও সাহসী হয়ে উঠছে।
স্থানীয়দের উদ্বেগ ও অসন্তোষ
এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ সুরমার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে পরিবারবদ্ধ এলাকাগুলোর বাসিন্দারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তারা মনে করেন, এই পতিতাবৃত্তি শুধু নৈতিক অবক্ষয়ই নয়, বরং তরুণ প্রজন্মকে বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। অনেক স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে এসব হোটেলের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। এমনকি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেমন চাঁদাবাজি, মাদক সেবন ও সরবরাহ—এসবের সাথেও পতিতাবৃত্তি চক্রের যোগসাজশ রয়েছে।
সমাধানে যা করা প্রয়োজন
এই সমস্যার সমাধান সহজ নয়, তবে একে নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে:
- নিয়মিত ও গোপন অভিযান: পুলিশের উচিত পূর্ব ঘোষণা ছাড়া এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে অভিযান পরিচালনা করা। যেন অপরাধীরা আগেভাগেই পালাতে না পারে।
- হোটেলগুলোর নিবন্ধন ও নজরদারি: যেসব হোটেলে নিয়মিত এমন অপরাধ ঘটে, সেগুলোর লাইসেন্স বাতিল করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
- জনসচেতনতা ও সামাজিক উদ্যোগ: অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় নেতাদের এগিয়ে এসে যৌন ব্যবসার সামাজিক পরিণতি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
- কমিউনিটি পুলিশিং চালু করা: প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে একটি পুলিশ কমিটি গঠন করে নজরদারি চালানো যেতে পারে।
- আইনজীবী ও বিচার বিভাগের সক্রিয়তা: অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং জামিনের অপব্যবহার রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
Author Profile

Latest entries
BangladeshJune 8, 2025মাদক ব্যবসায় পুলিশের সহায়তা ও যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়
BangladeshJune 4, 2025আজমিরীগঞ্জে মা’দক বিক্রি বন্ধে আইনশৃংখলা বাহিনীর হস্ত’ক্ষেপ কামনা
BangladeshMay 8, 2025কারাগারে ও পুলিশ হেফাজতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে
BangladeshFebruary 16, 2025কোন পথে বাংলাদেশ?